বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন তন্তু (ঘ বিভাগ)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান - | NCTB BOOK
51
51

প্রতিটি তত্ত্বর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এই বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন শ্রেণির তন্তুগুলোর গুণাগুণ ও ব্যবহারবিধি ভিন্ন ভিন্ন হয়। তন্তুর গুণাগুণ জানা থাকলে বিভিন্ন তন্তু দ্বারা উৎপাদিত বস্ত্রকে ডাইং, প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারি ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় আরও আকর্ষণীয় করা যায়। এছাড়া স্থান-কাল-পাত্রভেদে সঠিক তন্তুর বত্র সঠিক স্থানে ও পরিচ্ছন্নভাবে নির্বাচন করে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটানো যায়।

এই অধ্যায় শেষে আমরা

  • প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম তন্তুর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে পারব।
  • গঠনমূলক ও সজ্জামূলক নকশার পার্থক্য নির্ণয় করতে পারব।
  • বত্র অলংকরণে ডাইং, প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারির পদ্ধতিসমূহ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • গঠনমূলক জামায় বিভিন্ন প্রকার অলংকরণের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করতে উৎসাহী হবে।
  • ব্যক্তিত্ব ও রুচি প্রদর্শনে পোশাকের পারিপাট্য বজায় রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারব।
  • পোশাক পরিচ্ছন্নতার ধাপ বর্ণনা করতে পারব।
Content added By

বয়ন তন্তুর গুণাগুণ (দ্বাদশ অধ্যায়)

35
35
Please, contribute by adding content to বয়ন তন্তুর গুণাগুণ.
Content

প্রাকৃতিক তন্তুর গুণাগুণ (পাঠ ১)

41
41

(ক) তুলাতন্তুর (সুতি কাপড়ের) গুণাগুণ

সুতি কাপড়ের তত্ত্বগুলো আসে তুলা থেকে। অল্প দৈর্ঘ্যের তুলাতন্তু অপেক্ষা বেশি দৈর্ঘ্যের তুলা তন্তুর কাপড় বেশি সুন্দর ও টেকসই হয়। মোটা ও ছোট তন্তু হতে নিকৃষ্ট ও মোটা জাতীয় কাপড় তৈরি করা হয়। তুলাতন্তু দ্বারা তৈরি সুতি কাপড়ে সহজে ভাঁজ পড়ে, কম উজ্জ্বল হয়, তাপ সুপরিবাহী হয় এবং এর শোষণক্ষমতা ভালো হওয়ায় সব ঋতুতে ব্যবহার করা যায়। সুতিবস্ত্রের যত্ন নেওয়া সহজ। মাড় প্রয়োগ করা যায়। উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য সাদা বস্ত্রে নীল দেওয়া যেতে পারে এবং ইস্ত্রি করার সময় বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় না।
সাবান, সোডা, গরম পানি ইত্যাদি দিয়ে ধোয়া যায়। ধোয়ার সময় ঘষা ও রগড়ানো যায়। তুলাতন্তুর মূল্য তুলনামূলকভাবে কম, তাই পোশাক ছাড়াও এই তন্তুর তৈরি বস্ত্র বিছানার চাদর, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, মশারি, লেপ, সোফার কাপড়, ন্যাপকিন, ঘর সাজানোর সামগ্রী ইত্যাদি কম ব্যয়বহুল হয়।

(খ) ফ্ল্যাক্সতন্তুর (লিনেন কাপড়ের) গুণাগুণ

লিনেন বস্ত্র উৎপাদন হয় ফ্ল্যাক্সতত্ত্ব থেকে। আর ফ্ল্যাক্সতন্তুর উৎপত্তি হচ্ছে তিসি বা মসিনা গাছ (Flax) থেকে। এর উজ্জ্বলতা রেশমের মতো নয়, তবে তুলার তুলনায় উজ্জ্বল হয়। তুলাতত্ত্ব অপেক্ষা দুই থেকে তিন গুণ বেশি শক্তিশালী, ভেজালে এ শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়। পানি শোষণ ক্ষমতাও তুলার চেয়ে ভালো। তবে এরূপ বস্ত্রে সহজে ভাঁজ পড়ে।

ফ্ল্যাক্সতত্ত্ব দিয়ে সূক্ষ্ম সুতা ও মসৃণ লিনেন বস্ত্র তৈরি করা যায়, যা বেশ চকচকে, মজবুত ও ঠান্ডা। বিভিন্ন রং প্রয়োগ করে এদের সৌন্দর্য আরও বাড়ানো যায়। এরূপ বস্ত্র পরিধানে আরাম বোধ হয়। এই তন্তু সমতলভাবে অবস্থান করে এবং সুন্দরভাবে ঝুলে থাকে। তাই টেবিল কভার, বিছানার চাদর, রুমাল, পর্দা, পরিধেয় ও গৃহস্থালি বস্ত্র হিসেবেও এর জনপ্রিয়তা অনেক। পানি শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকায় লিনেন বস্ত্র গরমের দিনের পোশাকের জন্য বেশ আরামদায়ক।

কাজ ১- সুতি ও লিনেন বস্ত্রের বৈশিষ্ট্যের তুলনা করো।

(গ) রেশমতত্ত্বর গুণাগুণ- রেশম প্রাকৃতিক তন্তুর মধ্যে সবচেয়ে বড়, উজ্জ্বল ও মোলায়েম প্রাণিজ তন্তু। গুটি পোকার লালা থেকে এটা উৎপাদিত হয়। রেশমতত্ত্বর বস্ত্রে সহজে ভাঁজ পড়ে না। সূর্যালোকে রেশম দুর্বল হয়। অধিক তাপে সাদা রেশম হলুদ রং ধারণ করে। রেশম তত্ত্ব তাপের ভালো পরিবাহী নয়, তাই গ্রীষ্মকালে পরিধান করলে গরম বেশি লাগে। সাবান, সোডা ইত্যাদি ক্ষারীয় পদার্থে রেশম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরূপ বস্ত্রে শুষ্ক অবস্থায় সহজে তিলা বা ছোট ছোট দাগ পড়ে না। সহজে সংকুচিত হয় না। রং ধারণ ক্ষমতাও ভালো, তবে ঘামে এ তত্ত্বর বেশ ক্ষতি হয়। রেশমি বস্ত্র সুতি ও লিনেনের চেয়ে ওজনে হালকা। এর বহুমুখী ব্যবহার উপযোগিতার কারণে শার্ট, ব্লাউজ, ছেলে ও মেয়েদের পোশাক, সজ্জামূলক উপকরণের উপযোগী বত্র ইত্যাদি এ তত্ত্ব থেকে তৈরি করা হয়। রেশমি বস্ত্র দামি তবে যত্নসহকারে ব্যবহার করলে অনেকদিন স্থায়ী হয়।

(ঘ) পশমতত্ত্বর গুণাগুণ- পশম একটি প্রাণিজ তন্তু। বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে ভেড়ার লোমই পশমি বস্ত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়। পশম তন্তুর পানি শোষণক্ষমতা সবচেয়ে ভালো। পশম তত্ত্ব বেশ নমনীয় ও স্থিতিস্থাপক। এজন্য সহজে ভাঁজ পড়ে না। পশম তাপের সুপরিবাহী নয়। তাই সোয়েটার, মোজা, মাফলার, কোট, প্যান্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি পশমি বস্ত্র শীতবস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পশম দিয়ে নানা ধরনের কম্বল, শাল, কার্পেট ইত্যাদিও তৈরি করা হয়। ভিজলে পশমি বস্ত্রের আকৃতি ও শক্তি কিছুটা কমে যায়। তাই ধোয়া ও ইস্ত্রি করার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যত্নসহকারে ব্যবহার করলে অনেকদিন ব্যবহার করা যায় এবং টেকসই হয়।

কাজ ১- ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কয়েকটি দল তৈরি করো। প্রত্যেক দল বিভিন্ন ধরনের বস্ত্রের টুকরা সংগ্রহ করে তত্ত্বর গুণাগুণ শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করো এবং বিভিন্ন কাপড়ের বৈশিষ্ট্যের তুলনা করো।
কাজ ২- প্রাত্যহিক জীবনে কোন তন্তু কী কাজে ব্যবহৃত হয় একটি ছকে তা উল্লেখ করো।
Content added By

কৃত্রিম তন্তুর গুণাগুণ (পাঠ ২)

36
36

অনেক তত্ত্ব আছে যা প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় না। মানুষ প্রাকৃতিক তত্ত্বর সাথে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে কিংবা শুধু রাসায়নিক দ্রব্য থেকে যেসব তত্ত্ব আবিষ্কার করে তাদেরকে কৃত্রিম তন্তু বলে। যেমন-নাইলন, রেয়ন, পলিয়েস্টার ইত্যাদি। এই পাঠে রেয়ন ও নাইলন তন্তুর গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

(ক) রেয়নতত্ত্বর গুণাগুণ- রেয়ন তন্তুর বস্ত্র রেশম তন্তুর মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল। তাই একে কৃত্রিম রেশমও বলা হয়। রেয়নের স্থিতিস্থাপকতা রেশমের চেয়ে বেশি। রেয়ন তাপের সুপরিবাহক। রেয়ন উৎপাদনের মূল উপাদান বিশুদ্ধ সেলুলোজ। রেয়ন তত্ত্ব সাধারণত আলোর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ১৪৯০ সেলসিয়াসের অধিক তাপে পুড়ে যায়। পানিতে রেয়নতত্ত্ব সুতি অপেক্ষায় বেশি সংকুচিত হয়। মৃদু ক্ষারে এসব তন্তুর বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না। পরিষ্কার ও শুষ্ক অবস্থায় থাকলে এরা তিলা দিয়ে আক্রান্ত হয় না, তবে স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় থাকলে তিলা পড়ে। এসব তন্তুর রং ধারণের ক্ষমতা ভালো। পানিতে ভেজালে দুর্বল হয়ে যায়, শুকালে আবার শক্তি ফিরে আসে।

অন্যান্য বস্ত্রের তুলনায় রেয়ন সস্তা। বিভিন্ন মূল্যের রেয়ন বস্ত্র বাজারে পাওয়া যায় বলে এরূপ বত্র সহজেই অনেকে কিনতে পারে। রেয়ন তত্ত্বর একটি গুণ হলো এর আকর্ষণীয় রূপ। বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন মাত্রার এরূপ উজ্জ্বল তন্তু বাজারে পাওয়া যায়। এছাড়া বহুমুখী ব্যবহারের জন্য এই তত্ত্ব বেশ জনপ্রিয়। এরূপ তন্তুর নির্মিত কার্পেট, বিছানার চাদর, গৃহসজ্জার সামগ্রী, পর্দা ইত্যাদি ঘরের নতুনত্ব আনয়ন করে। রেয়ন তন্তুর বত্র মজবুত, উজ্জ্বল ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এরূপ বসত্র সহজে ধোয়া ও যত্ন নেওয়া যায়।

(খ) নাইলনতস্তুর গুণাগুণ - কৃত্রিম তন্তু বলে এর দৈর্ঘ্য ও ব্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ তন্তুর কিছুটা চাকচিক্য আছে। নাইলন তত্ত্ব ওজনে হালকা তবে বেশ মজবুত, নমনীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী। পানিতে ভিজলে এর শক্তির কোনো পরিবর্তন হয় না। এই তত্তুর বসেত্র কোনো ভাঁজের দাগ পড়ে না। নাইলনের মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করতে পারে না। এজন্য গরমের দিনের চেয়ে বর্ষা বা শীতের দিনে এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়। নাইলন তন্তুর তাপ সহ্য করার ক্ষমতা কম। ১৮৯° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নাইলন তত্ত্ব গলে যায় এবং ধূসর বা তামাটে রঙের আঠালো ছাই অবশিষ্ট হিসেবে থাকে, যা বাতাসের সংস্পর্শে শক্ত হয়ে যায়। অধিক তাপে এই তত্ত্ব গলে যায়। তবে ধোয়ার সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করা চলে। সূর্যের আলোতে এ তত্ত্বর কোনো ক্ষতি হয় না। মৃদু ক্ষার এবং মৃদু এসিডেও কোনো ক্ষতি হয় না। তবে গাঢ় এসিডের সংস্পর্শে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্লোরিনের মতো উগ্র ব্লিচিং পদার্থ নাইলন বস্ত্রে ব্যবহার করতে নেই।

এই তত্ত্ব মথ, ছত্রাক প্রভৃতি দিয়ে আক্রান্ত হয় না। পানি শোষণ ক্ষমতা এ তন্তুর কম। রঙের প্রতি আসক্তিও কম। রং প্রয়োগে বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়।
নাইলনের বস্ত্র মজবুত ও ওজনে হালকা হওয়ায় এর বহুমুখী ব্যবহার দেখা যায়। টেকসই ও স্থিতিস্থাপক বলে অন্তর্বাস, মশারি, বিছানার চাদর, আসবাবপত্রের ঢাকনা, ছাতার কাপড়, ফিতা, চুলের নেট, লেস, সুতা, মাছ ধরার জাল, চামড়ার সামগ্রীর আস্তরণ, কার্পেট, গলফ খেলার ব্যাগ ইত্যাদি তৈরিতে নাইলনের সুতা ও বস্ত্র ব্যবহৃত হয়।

নাইলনের বত্র সহজেই ধোয়া ও শুকানো যায়, এজন্য বর্ষার দিন বেশি ব্যবহার করা হয়। নাইলনের তত্ত্ব অন্যান্য তন্তুর সমন্বয়ে নানা ধরনের গুণসম্পন্ন বস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যেমন নাইলন সুতি, নাইলন পশম, নাইলন রেয়ন ইত্যাদি। ময়লার প্রতি আকর্ষণ কম বলে সহজে ময়লা ধরে না। ইত্রি করারও বেশি দরকার হয় না।

কাজ ১- নিচের ছকের বাম দিকের কলামে কৃত্রিম তন্তুর নাম দেওয়া আছে। প্রত্যেকের বিপরীতে ডান দিকের কলামগুলোতে উক্ত শ্রেণির তত্ত্বর গুণাগুণ ও ব্যবহার সম্পর্কে লিখবে।
বিভিন্ন শ্রেণির তত্ত্বতন্তুর গুণাগুণতন্তুর ব্যবহার
রেয়নতত্ত্ব
নাইলনতত্ত্ব
Content added By

অনুশীলনী

30
30

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

১. নিচের কোনটি তৈরিতে নাইলনতত্ত্ব ব্যবহার করা হয়?

ক. পর্দা
খ. রুমাল
গ. টেবিল কভার
ঘ. ছাতার কাপড়

২. কোন তন্তুর তৈরি পোশাকে রঙের বৈচিত্র্য কম দেখা যায়?

ক. লিনেন
খ. রেশম
গ. রেয়ন
ঘ. নাইলন

নিচের উদ্দীপকটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
ফারহানা তার প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি সাদা রঙের দামি শাড়িটিকে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে দিয়ে অফিসে চলে যান। বিকেলে বাসায় এসে শাড়িটি ঘরে আনার পর তিনি দেখতে পান কাপড়টির উজ্জ্বলতা কমে গেছে ও হলুদ রং ধারণ করছে।

৩. ফারহানার শাড়িটি কোন তন্তুর তৈরি?

ক. সুতি
খ. রেশম
গ. লিনেন
ঘ. রেয়ন

৪. ফারহানার শাড়িটির যথাযথ বা উপযুক্ত যত্নের জন্য প্রয়োজন-
i. ধোয়ার কাজে সাবান বা সোডা ব্যবহার না করা
ii. ছায়ায় শুকাতে দেওয়া
iii. মৃদু তাপে ইস্ত্রি করা
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন :

১. সায়েরা গ্রীষ্মের দুপুরে ছেলে ইরফানকে সুতির শার্ট প্যান্ট ও মেয়ে সাবাকে রেশমের জামা পরিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। মা খেয়াল করেন বিয়েবাড়ির অতিরিক্ত লোকজনের ভিড়ে তার ছেলেটি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও মেয়ে সাবা কিছুটা অস্বস্তিতে ভুগছে। বাসায় ফেরার পর মা ইরফান ও সাবার পরিহিত কাপড়গুলোকে একসাথে গরম পানিতে ভিজিয়ে সাবান দিয়ে ঘষে ধুয়ে দেন।

ক. ফ্ল্যাক্স-এর উৎস কোনটি?
খ. সব ঋতুতে সুতি বস্ত্রের ব্যবহার আরামদায়ক কেন? বুঝিয়ে লেখো।
গ. সাবার অস্বস্তিতে ভোগার কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে সায়েরার প্রক্রিয়ার যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

Content added By

বস্ত্র অলংকরণ (ত্রয়োদশ অধ্যায়)

59
59
Please, contribute by adding content to বস্ত্র অলংকরণ.
Content

গঠনমূলক ও সজ্জামূলক নকশা (পাঠ ১)

56
56

আমরা জানি যে বিভিন্ন ধরনের বয়ন তত্ত্ব থেকে সুতা উৎপাদনের পর উক্ত সুতা দিয়ে বত্র তৈরি করা হয়। আবার অনেক সময় সরাসরি তত্ত্ব থেকেও বস্ত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। বস্ত্র যে প্রক্রিয়ায়ই তৈরি করা হোক না কেন তা সব সময় সরাসরি বাজারে ছাড়া হয় না। অনেক সময় বস্ত্রকে আকর্ষণীয় করে বাজারে ছাড়া হয়। বত্র কতভাবে অলংকরণ করা যায় সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে কি? প্রকৃতপক্ষে বত্র নানাভাবে অলংকরণ করা যায়। বস্ত্রের বৈচিত্র্য আনয়ন কিংবা আকর্ষণ বৃদ্ধি করার জন্যই বস্ত্র অলংকরণ করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের তন্তু থেকে সুতা ও বস্ত্র উৎপাদন করা হয়। একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, আমরা যে পোশাক ব্যবহার করি তার মধ্যে কিছু আছে সাধারণ বসূত্র দিয়ে তৈরি, আবার কিছু বস্ত্র আছে ডিজাইন সমৃদ্ধ। এই সাধারণ বস্ত্রের নকশাকে গঠনমূলক এবং ডিজাইন সমৃদ্ধ বস্ত্রের নকশাকে বলে সজ্জামূলক নকশা। অন্যভাবে বলা যায় যে বস্ত্রের মূল কাঠামো দেওয়ার জন্য যে নকশা করা হয় তাকে গঠনমূলক নকশা বলে এবং বস্ত্রকে আকর্ষণীয় করার জন্য যে নকশা করা হয়, তাকে সজ্জামূলক নকশা বলে।
ওভেন ফেব্রিকের ক্ষেত্রে অর্থাৎ তাঁতে যে বস্ত্র উৎপাদন করা হয় তার গঠনমূলক নকশা তৈরির জন্য দুই সেট সুতার প্রয়োজন হয়। এক সেট সুতা তাঁতে লম্বালম্বিভাবে সাজানো থাকে, আর এক সেট সুতা লম্বালম্বি সুতার ভেতর দিয়ে আড়াআড়িভাবে চালনা করে বস্ত্র উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু বস্ত্রের গঠন প্রদানের জন্য সহজ পদ্ধতিতে গঠনমূলক নকশার বত্র উৎপাদন করা হয়, যেমন- এক রঙের সুতির লংক্লথ, ভয়েল, জিন্স ইত্যাদি বসত্র। অন্যদিকে বত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন ডিজাইনের সুতা ব্যবহার করে জটিল প্রক্রিয়ায় সজ্জামূলক নকশার বস্ত্র উৎপাদন করা হয়, যেমন- জামদানি বত্র।

গঠনমূলক নকশার বস্ত্র সজ্জামূলক নকশার বত্র

ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বস্ত্র উৎপাদনের সময়ই গঠনমূলক ও সজ্জামূলক নকশা সৃষ্টি করা হয়। তবে গঠনমূলক নকশার বস্ত্র উৎপাদনের পরও আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বত্র অলংকৃত করে বস্ত্রকে সজ্জামূলক বস্ত্রে পরিণত করতে পারব। যেমন- এক রঙের কাপড়ের উপর প্রিন্টিং, পেইন্টিং, এমব্রয়ডারি বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় বস্ত্রকে সজ্জামূলক করা যায়। এক্ষেত্রে গঠনমূলক নকশার বস্ত্র উৎপাদনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে পরবর্তী সময়ে তা সজ্জামূলক বসেত্র পরিণত করা যায়। আবার সজ্জামূলক বস্ত্রের ক্ষেত্রেও গঠনমূলক নকশার বস্ত্রের রং, জমিন ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- সুতি বস্ত্রে উলের সুতা ব্যবহার না করাই ভালো।

গঠনমূলক নকশার বস্ত্রকে সজ্জামূলক নকশার বস্ত্রে
পরিণতকরণ

কাজ- ১ গঠনমূলক এবং সজ্জামূলক নকশার বস্ত্র ক্লাসে উপস্থাপন করো।

প্রিন্টিং, পেইন্টিং, এমব্রয়ডারি বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় যখন শুধু কোনো কিছুর কাঠামো প্রদান করা হয় তখন তা গঠনমূলক নকশা হবে। অন্যদিকে সজ্জামূলক নকশায় নকশাটিকে আকর্ষণীয় ও কারুকার্যময় করা হবে। এক্ষেত্রে সজ্জামূলক নকশার বসত্রটি যেন অনেক জটিল না হয় এবং যুগোপযোগী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বস্ত্রের ওপর গঠনমূলক নকশা বস্ত্রের ওপর সজ্জামূলক নকশা

কাজ ১- কী কী উপায়ে গঠনমূলক নকশা ও সজ্জামূলক নকশা সৃষ্টি করা যায়, ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।
Content added By

ডাইং ও প্রিন্টিং (পাঠ ২)

44
44

বস্ত্র উৎপাদনের সময় কীভাবে এবং কতভাবে বত্র অলংকরণ করা যায় সে সম্পর্কে আমরা পূর্ববর্তী পাঠে জেনেছি। আমরা কি বলতে পারি কী কী পদ্ধতিতে বসত্র তৈরির পর অলংকরণ করা যায়? রঙের সাহায্যে ডাইং, প্রিন্টিং করে আমরা একটি সাধারণ বস্ত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারি। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।

ডাইং- ডাইং বলতে রং প্রয়োগ করাকে বোঝায়। এই রং তত্ত্ব, সুতা, বস্ত্র বা পোশাকে প্রয়োগ করে বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। ডাইং-এর মাধ্যমে বস্ত্রের উভয় পিঠেই রং লাগে। টাই-ডাই পদ্ধতিতে অনেক সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কাপড়কে বেঁধে, তরল রঙে কাপড় ডুবিয়েও বস্ত্রের উভয় দিকে নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়। সরাসরি বত্র রং না করে কাপড় বেঁধে রং করা হয় বলে এই পদ্ধতিকে টাই-ডাই বলা হয়। এক্ষেত্রে যেসব সরঞ্জাম ও উপকরণ লাগবে তা হচ্ছে: পাতলা কাপড়, সুতা, বোতাম, ছোট ছোট পাথর, ডাল, ছোলা, রং, কস্টিক সোডা, খাওয়ার সোডা, লবণ, কাঁচি, আঠা, স্কেল, প্লাস্টিকের গামলা ইত্যাদি।

ডাই করার পদ্ধতি- নতুন কাপড়ে মাড় থাকলে রং ভালোভাবে ধরে না। তাই প্রথমেই মাড় দূর করে, শুকিয়ে, ইস্ত্রি করে নিতে হবে। তারপর কাপড়টিকে বিভিন্নভাবে ভাঁজ দিয়ে, সেলাই করে অথবা পাথরের টুকরা, ডাল ইত্যাদি কাপড়ের ভেতর রেখে সুতা দিয়ে বেঁধে রঙে কাপড়টি ডোবাতে হবে। এতে করে বাঁধা অংশে রং ঢুকতে পারে না। ফলে শুকানোর পর যখন সুতা খোলা হবে তখন সুন্দর একটি ডিজাইন সৃষ্টি হবে। রং করার জন্য কাপড়ের ওজনের ১০ গুণ পানিতে হবে। ১ গজ কাপড় রং করার জন্য একটি স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে ১ লিটার পানি ফুটন্ত গরম করে নিতে হবে। এখন তিনটি ছোট পাত্রে ১ গজ কাপড়ের জন্য। 을 গ্রাম ভ্যাট,২ গ্রাম কষ্টিক সোডা, ২ গ্রাম হাইড্রোসালফাইড গরম পানিতে গুলে পর্যায়ক্রমে ফুটন্ত পানিতে ছেঁকে দিতে হবে। এরপর রঙের পাত্রে কাপড় দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে কাপড় ধুয়ে, শুকিয়ে, বাঁধন খুলে ইস্ত্রি করে নিতে হবে।

কাজ ১- প্রত্যেকে ১২/১২ এক টুকরা কাপড়কে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাঁধো এবং বাঁধা কাপড়টি রং করে, ধুয়ে, শুকিয়ে ডিজাইনটি তুলে ধরো আর পরবর্তী ক্লাসে দেখাও।

প্রিন্টিং- প্রিন্টিং মানেই হচ্ছে বসেত্র রং ও নকশার একত্রে প্রয়োগ। প্রিন্টিং বা ছাপার মাধ্যমে রঙয়ের সাহায্যে নকশা সৃষ্টি করে বত্র বা পোশাককে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। আমরা ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারব।
প্রিন্টিং-এর কাজ তন্তু বা সুতায় করা যায় না। বস্ত্র বা পোশাকের নির্ধারিত নকশায় বিভিন্ন রঙের ছাপ দেওয়া হয়। ছাপার কাজে বস্ত্রের এক পিঠে রং করা হয়।
নানা ধরনের প্রিন্টিং-এর মাধ্যমে আমরা বসত্র অলংকরণ করতে পারি। যেমন- ব্লক প্রিন্টিং, বাটিক প্রিন্টিং, স্ক্রিন প্রিন্টিং ইত্যাদি। এর মধ্যে ব্লক প্রিন্টিং এর কাজটিই সবচেয়ে সহজ।
উপকরণ ও সরঞ্জাম- ব্লক প্রিন্টিং-এর জন্য আমাদের যেসব উপকরণ ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে সেগুলো হচ্ছে কাঠের টেবিল, রঙের ট্রে, রং, বিভিন্ন ধরনের ব্লক, পুরোনো কম্বল, তুলি, মার্কিন কাপড় ইত্যাদি।

ব্লক তৈরি- কাঠ, রাবার, স্পঞ্জ, সাবান, লিনোলিয়াম ইত্যাদি দিয়ে আমরা ব্লক তৈরি করতে পারব। বাজারে ব্লক কিনতে পাওয়া যায় এবং কেনা ব্লক অনেকদিন সংরক্ষণও করা যায়। তবে ঘরে আলুর উপর সুন্দর ডিজাইন করেও আমরা ব্লক তৈরি করতে পারি। এছাড়া ঢেঁড়শ, শাপলা ইত্যাদিরও নিজস্ব ডিজাইন রয়েছে। তাই এদের ওপর ডিজাইন আকার প্রয়োজন হয় না, কেটে নিলেই ডিজাইন দেখতে পাওয়া যায়।

ছাপা পদ্ধতি-প্রিন্টিং-এর আগে কাপড় ভালোভাবে ধুয়ে, ইস্ত্রি করে এবং কোন কোন অংশে ছাপ দেওয়া হবে তা ঠিক করে নিতে হবে। তারপর কাঠের টেবিলের উপর পুরোনো চাদর ও খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর কাপড়টি বিছিয়ে নিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুত রং কিনতে পাওয়া যায়। ব্লকে ভালোভাবে ঐ রং লাগিয়ে কাপড়ের উপর চাপ দিলেই প্রিন্টিং হয়ে যায়। ছাপা হয়ে গেলে ছায়াযুক্ত স্থানে বা বাতাসে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হয়।

কাজ ১- প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান বা রাবার-এর উপর ব্লক তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে একটি কাপড় প্রিন্ট করো।
Content added By

পেইন্টিং, এমব্রয়ডারি (ক্রস ফোঁড়) (পাঠ ৩)

29
29

রঙের সাহায্যে পেইন্টিং করে কিংবা সুচ সুতার সাহায্যে এমব্রয়ডারি করেও আমরা একটি সাধারণ বস্ত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে কোন কাজের জন্য কী ধরনের সরঞ্জাম লাগবে এবং কীভাবে বস্ত্র অলংকৃত করা যাবে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পেইন্টিং- এ পদ্ধতিতে আমাদের যেসব জিনিস প্রয়োজন হবে, সেগুলো হচ্ছে-বিভিন্ন সাইজের তুলি, রং, মিডিয়াম, টেবিল, মোটা কম্বল, কাপড়, ইত্রি ইত্যাদি। পেইন্টিং পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এই পদ্ধতিতে সূক্ষ্ম ডিজাইনের মাধ্যমে বস্ত্র অলংকরণ করতে পারা যায়।

পেইন্টিং-এর সাহায্যে বস্ত্র অলংকরণ

পদ্ধতি- প্রথমে কাপড় ধুয়ে মাড় দূর করে ইস্ত্রি করে নিতে হবে। তারপর কাপড়ে ডিজাইন এঁকে টেবিলের ওপর কম্বল বিছিয়ে, তার ওপর কাপড়টি রেখে তুলি দিয়ে নির্ধারিত জায়গায় রং প্রয়োগ করতে হবে। রং বেশি ঘন হলে কয়েক ফোঁটা মিডিয়াম দিয়ে পাতলা করে নিতে হবে। তবে বেশি পাতলা যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। রং করা হয়ে গেলে ছায়ায় শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হবে। ইস্ত্রি করার সময় রং করা অংশের উপর একটি আলগা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নিতে হবে। পেইন্টিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন পোশাক, দেয়াল সজ্জা বা গৃহসজ্জার সামগ্রী আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।

কাজ ১- নকশা একে একটি কাপড়ে পেইন্টিং করো।

এমব্রয়ডারি বস্ত্র অলংকরণে এমব্রয়ডারি বিশেষ অবদান রাখে। আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে এমব্রয়ডারি কী? সুচ সুতার সাহায্যে বিভিন্ন রকম ফোঁড় ব্যবহার করে বস্ত্রের ওপর যে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় তাকেই বলা হয় সুচি নকশা বা এমব্রয়ডারি। বস্ত্রে এমব্রয়ডারির প্রচলন অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। তবে আগে এমব্রয়ডারির কাঁচামাল ছিল খাঁটি রেশম সুতা, সোনা বা রুপার তৈরি সুতা, দামি মুক্তা বা অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। বর্তমানকালে আমরা কাঁচামাল হিসেবে বেশ সাধারণ উপকরণ দিয়েই একাজ করতে পারি। যেমন বিভিন্ন রঙের সুতা, চুমকি, আয়না, পুঁতি ইত্যাদি। এছাড়া এ কাজের জন্য প্রয়োজন হবে বিভিন্ন ধরনের সুচ, ফ্রেম, কাগজ, কার্বন পেপার, পেন্সিল, স্কেল, রাবার, কাঁচি, কাপড় ইত্যাদি।

হ্যান্ড এমব্রয়ডারির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

পদ্ধতি- এ কাজে কাপড় ধোয়ার প্রয়োজন নেই। তবে কাজ করার সময় পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমে কাপড়ের পর হালকা করে ডিজাইন একে নিতে হবে। এরপর ফ্রেমে কাপড় আটকিয়ে সুচ সুতার সাহায্যে বিভিন্ন রকম ফোঁড় ব্যবহার করে কাজ শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে ফোঁড়গুলো অতিরিক্ত ঢিলা বা টাইট হওয়া যাবে না। সবশেষে উল্টো দিকে ইস্ত্রি করে নিলে সেলাই সুন্দর ও মসৃণভাবে কাপড়ের উপর বসে যায়।

এমব্রয়ডারি করার জন্য বিভিন্ন ফোঁড় সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকতে হবে এবং প্রকৃত কাজ করার আগে চর্চার মাধ্যমে এ কাজে দক্ষতা আনতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যে, নকশার বিভিন্ন অংশে যেন সঠিক ফোঁড় ব্যবহার করা হয়। রং নির্বাচনেও সতর্ক থাকতে হবে। যেমন- ফুলের জন্য লাল, গোলাপি, হলুদ ইত্যাদি আবার পাতার জন্য সবুজ রং বাছাই করা যেতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বিভিন্ন স্টিচ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছি। এ পাঠে আরও কিছু ফোঁড় উল্লেখ করা হলো-

ব্রুস ফোঁড়- চটজাতীয় কাপড়ের উপর এই ফোঁড় প্রয়োগ করে সুন্দর ডিজাইন সৃষ্টি করা যায়। এই সেলাইয়ের জন্য চিত্রের মতো এক সারি ফোঁড় তেরছা অথচ সমান্তরালভাবে করে যেতে হবে। তারপর আগের ফোঁড়কে ভিত্তি করে চিত্রের মতো ক্রসভাবে ফোঁড় তুলতে হবে।

Content added By

ব্লাংকেট, হেরিং বোন, পালক, স্যাটিন, পিকনিজ ও ফ্রেঞ্চ নট (পাঠ ৪)

27
27

ব্লাংকেট ফোঁড়- ব্লাংকেট ফোঁড় তৈরি করার সময় সেলাই বাম দিক থেকে ডান দিকে সরে যায়। নকশা বরাবর ওপর হতে সুচ ফুটিয়ে মাথা নিচের দিকে বের করে সুতা সুচের ওপর রেখে সুচ টেনে বের করতে হয়। কম্বলের খোলা ধার, রুমালের কিনারা, বোতাম ঘর, হাতার কিনারা ইত্যাদিতে এই ফোঁড় প্রয়োগ করা হয়।

কাজ ১- ক্রস ফোঁড়ের সাহায্যে একটি ডিজাইন তৈরি করে কিনারায় ব্লাংকেট ফোঁড় ব্যবহার করো।

হেরিং বোন ফোঁড়
আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পাব যে এই সেলাই দেখতে অনেকটা হেরিং মাছের কাটার মতো। তাই একে হেরিং বোন সেলাই বলে। এটা অনেকটা ক্রস ফোঁড়ের মতো। চিত্র অনুসরণ করে সেলাই করলেই ডিজাইন ফুটে উঠবে।

পালক ফোঁড়- পাখির পালকের মতো দেখতে হওয়ায় এ ফোঁড়কে পালক ফোঁড় বলা হয়। ডানদিকে বাঁকাভাবে ব্লাংকেট ফোঁড় দিয়ে পালক ফোঁড় সেলাই করা যায়। এছাড়া একই দিকে ৩/৪টি বোতামঘর ফোঁড় দিয়েও পালক ফোঁড় সেলাই করা যায়। ছোটদের জামার কলার, হাতার কিনারা, ট্রে ক্লথ, চাদরের কিনারা প্রভৃতি স্থানে এই ফোঁড় দেওয়া হয়।

কাজ ১- নেপকিনের কিনারায় হেরিং বোন ও পালক ফোঁড় প্রয়োগ করো।

স্যাটিন ফোঁড় ফুল, লতা পাতা ইত্যাদির ভেতরের অংশ ভরাট করতে এ সেলাই প্রয়োজন। সাধারণত নকশা ভরাট করার কাজে এ সেলাই ব্যবহার করা হয়। এ সেলাই সোজা ও উল্টো-দিকে একই রকম হয়। অনেক সময় প্রথমে নকশার বাইরের স্থানটিতে রান ফোঁড় দিয়ে নিয়ে মাঝের অংশে ঘনঘন লম্বা ফোঁড় দিয়ে সেলাই করা হয়।

কাজ ১- তোমার পছন্দমতো একটি নকশা এঁকে স্যাটিন ফোড়ের সাহায্যে ভরাট করো।

পিকিনিজ ফোঁড়- এই সেলাইয়ের জন্য প্রথমে এক লাইনে সমান মাপের বখেয়া ফোঁড় দিয়ে যাবে। এরপর দ্বিতীয় সেলাই শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে সুচটি প্রথমে চিত্রের মতো নিচ থেকে ওপরে তুলতে হবে। তারপর দ্বিতীয় ফোঁড়ের নিচ দিয়ে সুচটি ওপরে তুলে প্রথম ফোঁড়ের নিচ দিয়ে আনতে হবে। আবার তৃতীয় ফোঁড়ের নিচ দিয়ে সুচটি ওপরে তুলে দ্বিতীয় ফোঁড়ের নিচ দিয়ে আনতে হবে। বখেয়া সেলাইকে ঘিরে এই ফাঁসগুলো ক্রমান্বয়ে বাম দিক থেকে ডান দিকে করে গেলে সুন্দর একটি ডিজাইন ফুটে ওঠে।

পিকিনিজ ফোঁড়

কাজ ১- একটি কাপড়ে বখেয়া ফোঁড় প্রয়োগ করে ভিন্ন রঙের সুতার সাহায্যে পিকিনিজ ফোঁড়ের চর্চা করো।

ফ্রেঞ্চ নট- ফ্রেঞ্চ নটের জন্য প্রথমে কাপড়ের সোজা দিকে সুচের কিছু অংশ তুলে অগ্রভাগে সুতার কয়েকটি পাক দিতে হবে। তারপর বাম হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে প্যাঁচানো অংশ চাপ দিয়ে ধরে সুচ ওপরে টেনে বের করে প্রথমে যেখানে সুচটি ওঠানো হয়েছিল ঠিক সেই জায়গায় আবার বসিয়ে দিতে হবে। এভাবে দুই-তিনবার করলেই ছোট ফুলের মতো দেখাবে।

কাজ ১- একটি কাপড়ে ডিজাইন এঁকে ফ্রেঞ্চ নটের সাহায্যে ফুল তৈরি করো।
Content added By

অনুশীলনী

29
29

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

১. এমব্রয়ডারির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান-

ক. সুতা, চুমকি, পুঁতি
খ. রং, তুলি, মিডিয়াম
গ. কস্টিক সোডা, লবণ, আঠা
ঘ. তুলি, রঙের ট্রে, ব্লক

২. সাধারণত চটজাতীয় কাপড়ের ওপর কোন ফোঁড় দিয়ে সহজে নকশা তৈরি করা যায়?

ক. পিকিনিজ ফোঁড়
খ. স্যার্টিন ফোঁড়
গ. ব্লাংকেট ফোঁড়
ঘ. ব্রুস ফোঁড়

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
নীলা তাঁর মেয়ে রোদেলার জন্য বাজার থেকে একটি সাদামাটা জামা কিনে এনে জামাটিতে কিছু চুমকি আয়না ও পুঁতি লাগিয়ে দিলেন।

৩. রোদেলার জামাটি কোন পদ্ধতিতে অলংকৃত করা হয়েছে ?

ক. প্রিন্টিং
খ. পেইন্টিং
গ. ডাইং
ঘ. এমব্রয়ডারি

৪. অলংকরণের ফলে রোদেলার জামাটি হবে-
i. আকর্ষণীয়
ii. কারুকার্যময়
iii. বৈচিত্র্যময়
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন :

১.

ক. এমব্রয়ডারি কী?
খ. একটি সাধারণ বস্ত্রকে কীভাবে অসাধারণ করা যায়? বর্ণনা করো।
গ. ১ নং চিত্রের বস্ত্রটি কোন কোন পদ্ধতিতে অলংকৃত করা যায়- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কাপড়ের বৈচিত্র্য আনয়নে ২ নং চিত্রের ভূমিকাই বেশি- তুমি কি একমত? সপক্ষে যুক্তি দাও।

Content added By

পোশাকের পারিপাট্য ও ব্যক্তিত্ব (চতুর্দশ অধ্যায়)

58
58
Please, contribute by adding content to পোশাকের পারিপাট্য ও ব্যক্তিত্ব.
Content

ব্যক্তিত্ব (পাঠ ১)

28
28

আমরা একটু লক্ষ করলে দেখতে পারব যে আমাদের ক্লাসের প্রত্যেকেরই বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে। যার ফলে আমরা একজন অন্যজন থেকে আলাদা। ব্যক্তিবিশেষের এই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোর সমষ্টি হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। আমাদের শারীরিক গঠন, চালচলন, কণ্ঠস্বর, মেজাজ ও আবেগের মাধ্যমেই ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। উত্তম ব্যক্তিত্বের প্রভাবে একজন মানুষ অন্য মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে, আবার দুর্বল ব্যক্তিত্বের কারণে মানুষ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।
আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পারব যে, উত্তম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তির হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে তার দেহের সৌন্দর্য, আত্মবিশ্বাস ও কাজের প্রতি আগ্রহ। পৃথিবীর প্রত্যেকের মতো আমরাও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সুস্থ ও আর্কষণীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারব। উত্তম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে জীবনের যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করতে পারে। রুগ্ন স্বাস্থ্য ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, কারণ স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে তার প্রতিটি কাজে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ ফুটে ওঠে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি যে শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গঠন করা যায়।

ব্যক্তিত্বের সামাজিক মূল্য অনেক বেশি। আমরা জীবনের মান, সম্মান, সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে অর্জন করতে পারি। কাজেই সফলতার পাশাপাশি সবার গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য অবশ্যই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে, নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে, পরিবেশ উপযোগী পারিপাট্য বজায় রেখে, বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে সুস্থ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারি।

আমরা কি বলতে পারব পারিপাট্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যক্তিত্বের সাথে এর সম্পর্কই-বা কী? স্কুলে আসার আগে আমরা নিশ্চয়ই পরিপাটি হয়ে এসেছি। পারিপাট্য বলতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকেই বোঝানো হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেহ, সময় উপযোগী রুচিশীল পোশাক এবং মার্জিত চলাফেরার মাধ্যমেই উত্তম ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করা যায়। আর এরূপ ব্যক্তির চলাফেরা ও পরিপাটি বেশভূষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই সহজ করতে সাহায্য করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, অপরিষ্কার দেহ কিংবা অপরিচ্ছন্ন মূল্যবান পোশাকে পারিপাট্য আনা যায় না। সুবেশী হতে হলে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া দরকার। অন্যদিকে এলোমেলো চুল, অপরিষ্কার দাঁত, নখ, হাত-পা ইত্যাদি যেকোনো অবস্থাতেই বিরক্তির সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত গোসল করে হাত, পা, চুল, নখ ইত্যাদির যত্ন নেওয়া উচিত।

পারিপাট্য রক্ষায় নখ, হাত, চুল, পা ইত্যাদির যত্ন

পারিপাট্য রক্ষায় উপযুক্ত পোশাকের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা উপযুক্ত পরিবেশে দেশীয় কৃষ্টির সাথে মিল রেখে এবং ঋতু অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করব। যেমন- আমাদের দেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশের জন্য এমন পোশাক নির্বাচন করব যা সহজে ঘাম শোষণ করে নেয়, ধোয়া যায় ও ইস্ত্রি করা যায়। এছাড়া দেহের আকৃতির সাথে মিল রেখে চুল বাঁধব। প্রসাধনসামগ্রী কখনো খুব বেশি ব্যবহার করব না। এতে ত্বকেরও ক্ষতি হয়। সব সময় ত্বকের রং, দেহের আকৃতি, উচ্চতা, ব্যক্তিত্ব, রুচি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে পোশাক পরিধান করব, এতে করে মনে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে, মন প্রফুল্ল থাকবে এবং কাজে উৎসাহ আসবে।

কাজ ১- ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য কীভাবে পারিপাট্য রক্ষা করা যায়? দলীয়ভাবে উপস্থাপন করো।
Content added By

ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের সম্পর্ক (পাঠ ২)

28
28

ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা আচরণই হচ্ছে তার ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের একটি সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুন্দর পোশাক রুচিশীল মনের পরিচয় দেয় এবং ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। কাজেই দেখা যায় যে, পোশাক ও ব্যক্তিত্ব এ দুটি একে অন্যের পরিপূরক। তবে এক্ষেত্রে জানতে হবে যে কোন পোশাক কার জন্য কতটুকু উপযুক্ত? আর এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে সবার আগে আমাদের নিজেকে জানতে হবে। অর্থাৎ আমার নিজের গায়ের রং, উচ্চতা, ওজন, দেহের গঠন, বয়স, মুখের আকৃতি ইত্যাদির দিকে লক্ষ রেখে পোশাক নির্বাচন ও পরিধান করতে হবে। এছাড়া যেসব বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, সেগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

১. পোশাকের ছাপা- বড় ও ছোট ছাপা ব্যক্তিত্বের ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। বড় বড় ছাপার নকশাবহুল পোশাকে স্থুলকায় ব্যক্তিকে আরও স্থুলকার দেখায়। তাই খর্বাকৃতি ও স্থুলকায়দের জন্য ছোট ছোট ছাপার পোশাক উপযোগী।

২. পোশাকের রং পোশাকের জন্য উপযুক্ত রং নির্বাচন করেও আমরা দেহের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারব। পোশাকের রং দেহের সাথে মানানসই না হলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব অনেকখানি ম্লান হয়ে যায়। দেহের ত্বক, চুল ও চোখের রঙের সাথে মিল রেখে পোশাকের রং নির্বাচন করা উচিত। যাদের দেহের রঙ উজ্জ্বল তারা যেকোনো রঙের পোশাকই নির্বাচন করতে পারে, তবে শ্যামলা রঙের ব্যক্তিদের হালকা রঙের পোশাকে ভালো দেখায়। লাল, হলুদ, কমলা রংগুলো গাঢ় ও উজ্জ্বল হওয়ায় দূর থেকে এদের চোখে পড়ে। যেহেতু এই উষ্ণ রংগুলোর তাপ শোষণ ক্ষমতা বেশি, তাই গরমকালে এ ধরনের রঙের পোশাকে আরও গরম অনুভূত হয়। এই রঙের পোশাকে পাতলা গড়নের ব্যক্তিকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী বলে মনে হয়।

অন্যদিকে নীল, সবুজ, নীলাভ সবুজ ইত্যাদি রং হালকা ও স্নিগ্ধ হওয়ায় এদের ঠান্ডা মনে হয়। তাই গরম কালে এ রঙের পোশাক নির্বাচন করা যেতে পারে।
৩. লম্বা এবং আড়াআড়ি রেখার পোশাক- চেক ও স্ট্রাইপ কাপড় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ লম্বা বা খাড়া রেখার পোশাক ব্যক্তির দেহ কাঠামোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে বড় করে তোলে। অন্যদিকে আড়াআড়ি রেখার পোশাকে অতিরিক্ত লম্বা ব্যক্তির দেহ কাঠামোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ছোট দেখায়।

পোশাকে আড়াআড়ি ও খাড়া রেখার প্রভাব

৪. পোশাকের আকার পোশাকের আকারের তারতম্য করেও দেহাকৃতির ওপর প্রভাব ফেলা যায়। পাতলা গড়নের ব্যক্তির জন্য ঢিলেঢালা, ফুল হাতা, ছোট গলার পোশাক বিশেষ উপযোগী। আবার বড় গলা, ছোট হাতার আঁটোসাঁটো পোশাকে স্থূলকায় ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী মনে হবে।
৫. পোশাকের পরিচ্ছন্নতা- ব্যক্তিত্ব বিকাশে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরিচ্ছদের সাথে সাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমরা আগেই জেনেছি যে নোংরা হলে দামি পোশাকও বিরক্তির সৃষ্টি করে। এ অবস্থা মানুষের ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে না।
৬. সমাজের রীতিনীতি- ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করার জন্য সমাজের রীতিনীতির দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এমন ধরনের পোশাক পরিধান না করাই ভালো। এতে ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য ফুটে উঠে না।
সর্বোপরি পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজসজ্জা, অলংকার ইত্যাদি সামগ্রী উপলক্ষ্য, নিজের সামর্থ্য ও অনুষ্ঠানের ভাবধারার প্রতি লক্ষ রেখে পরিধান করলে আত্মতৃপ্তির পাশাপাশি ব্যক্তিত্বও সবার কাছে প্রশংসিত হয়।

কাজ ১- ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের ডিজাইনের সম্পর্ক লেখো।
Content added By

অনুশীলনী

30
30

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :

১. পাতলা ব্যক্তির জন্য কোন ধরনের হাতার পোশাক বিশেষ উপযোগী?

ক. ছোট হাতা
খ. ফুল হাতা
গ. খ্রী কোয়ার্টার
ঘ. হাতকাটা

২. উপলক্ষ্যের প্রতি লক্ষ রেখে পোশাক নির্বাচন করলে
i. অপরের প্রশংসা পাওয়া যায়
ii. ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়
iii. আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায়
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
জবা ও রেবা দুই বোন। জবা আকারে লম্বা। অন্যদিকে রেবা শ্যামলা ও আকারে ছোট। তাই রেবা পোশাক নির্বাচনে সচেতন।

৩. কোন রেখার পোশাক জবাকে আপাতদৃষ্টিতে ছোট দেখাবে?

নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

৪. রেবার পোশাকের জন্য নিচের কোনটি অধিকতর উপযোগী

ক. গাঢ় রঙের বড় ছাপা
খ. হালকা রঙের বড় ছাপা
গ. হালকা রঙের ছোট ছাপা
ঘ. গাঢ় রঙের ছোট ছাপা

সৃজনশীল প্রশ্ন:

১. কমল ও কারিনা দুই ভাই বোন। গায়ের রং ও দেহের কাঠামোতে একে অপরের বিপরীত। কারিনা কৃষ্ণকায় এবং কমল স্থুলকার। পোশাকের ক্ষেত্রে কমল হালকা রং ও ছোট ছোট ছাপাকে প্রাধান্য দেয়। কারিনা ঢিলেঢালা কিন্তু উজ্জ্বল গাঢ় রঙের পোশাক পছন্দ করে। দাম নয়, পোশাকের নকশা ও আরামের বিষয়টি কমল ও কারিনা সব সময় বিবেচনা করে থাকে।

ক. ব্যক্তিত্ব কী?
খ. "পোশাক ও ব্যক্তিত্ব এ দুটি একে অন্যের পরিপূরক"- ব্যাখ্যা করো।
গ. পোশাক নির্বাচনে কারিনার উজ্জ্বল গাঢ় রঙের পোশাক নির্বাচনের কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের সম্পর্ক বিবেচনায় কমল ও কারিনার পোশাক নির্বাচন কতটা যথার্থ হরেছে আলোচনা করো।

Content added By

পোশাকের পরিচ্ছন্নতা (পঞ্চদশ অধ্যায়)

33
33
Please, contribute by adding content to পোশাকের পরিচ্ছন্নতা.
Content

দাগ তোলা (পাঠ ১)

32
32

সুষ্ঠুভাবে পোশাক পরিচ্ছন্নতার কাজটি সম্পন্ন করতে হলে কতগুলো ধাপ বা পর্যায় অনুসরণ করতে হয়। যেমন- বস্ত্র বাছাই করা, মেরামত করা, দাগ দূর করা, ধোয়ার উপকরণ ঠিক করা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখা, ধোয়ার পরিকল্পনা করা ইত্যাদি। উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করলে কাজটি যেমন-সহজ হয়ে উঠবে তেমনি সুন্দরভাবে সম্পাদন করা যাবে।

পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে দাগ অপসারণ বত্র ধোয়ার পূর্ব প্রস্তুতির অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়। কখনো কখনো পোশাক-পরিচ্ছদে এমন কিছু চিহ্ন বা রং দেখা যায় যেগুলো সাধারণভাবে ধুলে পরিষ্কার হয় না। এ ধরনের চিহ্ন অপসারণ করতে বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। পোশাক-পরিচ্ছদের এ ধরনের অবাঞ্চিত চিহ্নকেই দাগ হিসেবে গণ্য করা হয়। বত্র ধোয়ার আগে উক্ত দাগ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী অপসারণ করা প্রয়োজন। নতুবা উক্ত দাগ স্থায়ী হবার এবং অন্য বসেত্র লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে দাগ অপসারণের জন্য যেসব অপসারক ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-

১) মৃদু অপসারক- অক্সালিক এসিডের লঘু দ্রবণ, সিরকা বা এসেটিক এসিড, বেকিং সোডা, এমোনিয়া, বোরাক্স, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ইত্যাদি মৃদু অপসারক। মৃদু অপসারক ব্যবহারে সাধারণত কাপড়ের কোনো ক্ষতি হয় না। এজন্য দামি মিহি কাপড়ের দাগ অপসারণের জন্য এসব উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
২) উগ্র অপসারক- কাপড় কাঁচার সোডা, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, গাঢ় অক্সালিক এসিড, জাভেলী ওয়াটার, ক্লোরিন ইত্যাদি উগ্র অপসারক। এসব অপসারক বেশি সময় ধরে কাপড়ের সংস্পর্শে থাকলে কোনো কোনো কাপড়ের ক্ষতি হয়। এজন্য সর্তকতার সাথে এসব ব্যবহার করা উচিত।

কাপড় থেকে দাগ দূর করার সাধারণ নিয়ম

বস্ত্রাদি থেকে দাগ দূর করার সময় যে বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সেগুলো হলো-

১। কাপড়ে কোনো দাগ লাগলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাগ অপসারণের ব্যবস্থা করা দরকার। কারণ পুরোনো দাগ পরিষ্কার করা তুলনামূলকভাবে কঠিন।

২। কাপড়টি কোন শ্রেণির তন্তু দিয়ে তৈরি তা জানতে হবে, কারণ বিভিন্ন ধরনের তন্তুর জন্য বিভিন্ন অপসারক ব্যবহার করা হয়।

৩। দাগের উৎস জানতে হবে। উৎস না জেনে ভুল অপসারক ব্যবহার করলে অনেক সময় দাগ না ওঠে স্থায়ীভাবে বসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪। অজানা দাগে কখনো গরম পানি সরাসরি ব্যবহার করতে হয় না। এতে অনেক দাগ স্থায়ীভাবে বসে যায়।

৫। রঙিন কাপড়ে অপসারক ব্যবহারের আগে কাপড়ের রং নষ্ট করবে কি না তা জানা প্রয়োজন। এজন্য কাপড়ের এক কোনায় অল্প একটু অপসারক দ্রব্য ব্যবহার করে এ পরীক্ষা করা যেতে পারে।

৬। প্রথমে মৃদু অপসারক ব্যবহার করতে হবে। দাগ না উঠলে উগ্র অপসারক ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭। দাগ উঠে গেলে কাপড় থেকে অপসারক দ্রব্যটি ধুয়ে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে হবে।

৮। অপসারক দ্রব্যটি এসিড হলে দাগ উঠানোর পর কোনো লঘু ক্ষার দিয়ে প্রশমিত করতে হবে। অনুরূপভাবে কোনো ক্ষারযুক্ত অপসারক দ্রব্য লঘু এসিড দিয়ে প্রশমিত করতে হবে।

৯। একবারে কোনো শক্তিশালী অপসারক ব্যবহার না করে দুই থেকে তিনবার মৃদু অপসারক ব্যবহার করা নিরাপদ।

১০। কাপড় অপসারক দ্রবণে বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখা ঠিক না। দাগ দূর হওয়া মাত্র ধুয়ে শুকাতে দিতে হবে।

পোশাকটি যদি ধোয়ার যোগ্য হয় তাহলে দাগ অপসারণের ব্যাপারটি বেশ সহজ ও আনন্দদায়ক। এখানে কাপড় থেকে বিভিন্ন ধরনের দাগ অপসারণের উপায়গুলো বর্ণনা করা হলো-

১। রক্তের দাগ সুতি ও লিনেন বত্রে রক্তের দাগ লাগলে দাগযুক্ত স্থানটি কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর মৃদু সাবান গোলা পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। দাগ পুরোনো হলে লঘু এমোনিয়ার দ্রবণে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর পানি দিয়ে ধুলে পরিষ্কার হয়। রেশমি ও পশমি বসেত্র যদি দাগ না উঠে তবে লবণ গোলা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়।

২। কাদার দাগ- সাবান পানিতেই দাগ উঠে যাবার কথা। যদি না উঠে সেক্ষেত্রে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ অথবা অক্সালিক এসিডের দ্রবণে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা হয়।

কাজ ১- রক্ত ও কাদার দাগ অপসারণের উপায় লেখ।
Content added By

অন্যান্য দাগ তোলা (পাঠ ২)

35
35

কালির দাগ-সুতি ও লিনেন বস্ত্রে বলপেনের কালি লাগলে, দাগ বরাবর কাপড়ের নিচে ব্লটিং পেপার রেখে দাগযুক্ত স্থানটিতে প্রথমে মেথিলেটেড স্পিরিট ও তুলার গোল বল দিয়ে স্পঞ্জ করে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। জুতার কালিও একইভাবে অপসারণ করতে হবে। লেখার কালির দাগ লাগলে প্রথমে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এতে কালির দাগ দূর না হলে লঘু অক্সালিক এসিড বা এমোনিয়া দিয়ে পুনরায় ধুতে হবে।

ফুল ও ফলের কষ-সাদা সুতি বা লিনেন বস্ত্রে ফলের কষ লাগলে ফুটন্ত গরম পানি ধীরে ধীরে ঐ দাগ বরাবর একটু উপর থেকে ঢালতে হয়। তারপর সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। তবে জামের কষে সাবান ব্যবহার নিষিদ্ধ। রঙিন সুতি, লিনেন, রেশমি, পশমি এবং সিনথেটিক বস্ত্রে ফলের কষ লাগলে প্রথমে হালকা গরম পানি তারপর গ্লিসারিন ও সাদা ভিনেগার দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়।

চা ও কফির দাগ- সুতি ও লিনেন বস্ত্রে চা ও কফির দাগ লাগলে দাগযুক্ত স্থানটিতে বোরাক্স দ্রবণ বা লেবুর রস মেখে রোদে শুকানো হয়। এছাড়া ফুটন্ত পানি ১ থেকে ৩ ফুট ওপর থেকে ধীরে ধীরে ঢাললেও এই দাগ দূর হয়। রেশমি ও পশমি বস্ত্রে দাগ লাগলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দ্রবণে ভিজিয়ে স্পঞ্জ করে পরিষ্কার করা যায়।

হলুদের দাগ- সাদা সুতি ও লিনেন বস্ত্র হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে সাবান মেখে ঘাসের ওপর রেখে দিয়ে সূর্যালোকে শুকালে হলুদের দাগ উঠে যায়। অন্যান্য কাপড়ের ক্ষেত্রে দাগযুক্ত স্থানে কয়েক ফোঁটা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে অল্পক্ষণ রাখতে হয়, তারপর ভালোভাবে ধুয়ে শুকাতে হয়।

লোহার দাগ- লোহার দাগ নতুন হলে কাগজি লেবুর রস ঘসে পরিষ্কার করতে হয়। পুরোনো দাগে লবণ ও কাগজি লেবুর রস দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হয়। লঘু অক্সালিক এসিড দিয়েও লোহার দাগ দূর করা যায়।

ঘামের দাগ- নতুন ঘামের দাগ হলে সুতি ও লিনেন বস্ত্র সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকালেই হয়, দাগ পুরোনো হলে এমোনিয়া দ্রবণ বা লঘু হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দ্রবণে ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করতে হয়। রঙিন সুতি ও লিনেন বস্ত্র হলে দাগযুক্ত স্থানটি লঘু এমোনিয়ার দ্রবণে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তারপর মৃদু হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এবং সোডিয়াম হাইপোসালফাইটের দ্রবণে ভিজিয়ে রাখলে সব ধরনের ঘামের দাগ দূর হয়।

তরকারির ঝোলের দাগ- সাদা ও রং পাকা সুতির কাপড়গুলো সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকাতে দিতে হয়। এতে যদি দাগ অপসারণ না হয় তবে জাভেলী ওয়াটার দিয়ে ব্লিচ করা দরকার। রেশমি, পশমি ও রঙিন সুতির কাপড় সাবান গোলা পানি দিয়ে ধুয়ে ১০% পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করা হয়।

কাজ- হলুদের দাগ, লোহার দাগ, ঘামের দাগ, তরকারির ঝোলের দাগযুক্ত কাপড়ের দাগ অপসারণের উপায় দলীয়ভাবে আলোচনা করে উপস্থাপন করো।
Content added By

ধৌতকরণের পূর্ব প্রস্তুতি ও রেশমি বস্ত্র ধৌতকরণ (পাঠ ৩)

23
23

প্রায় সব পরিবারেই বস্ত্র ধোয়ার কাজটি কম বেশি সম্পাদন করতে হয়। বস্ত্র ধোয়ার কাজটি সহজ হলেও এজন্য তন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা ভালো। বস্ত্র ধোয়ার আগে কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে কাজটি সহজ হয়ে উঠে। এ কাজ সুষ্ঠুভাবে ও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে হলে কাপড় ধোয়ার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কতগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এ ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে নিচে তুলে ধরা হলো-

(১) লেবেল পরীক্ষা করা এবং বস্ত্র বাছাই করা - একেক প্রকার বস্ত্রের যত্ন যেহেতু একেকভাবে নিতে হয় তাই লেবেল দেখে তন্তু শনাক্ত করে যতদূর সম্ভব ঐ নির্দেশ অনুযায়ী বস্ত্রের যত্ন নিতে হবে। বাছাইকরণের সময় যেসব বত্র একত্রে ধোয়া যাবে সেগুলো একত্রে রাখতে হবে। যেমন- সুতি ও লিনেন বস্ত্র একত্রে ধোয়া যেতে পারে। এছাড়া পরিষ্কার করার সুবিধার জন্য ময়লার তারতম্য অনুসারে বস্ত্রগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেয়া যায়। যেমন- অল্প ময়লা বস্ত্রাদি, মাঝারি ধরনের ময়লা বস্ত্রাদি, অধিক ময়লা বস্ত্রাদি, সাদা ও রঙিন বস্ত্রাদি, মোজা রুমাল জাতীয় ছোটখাটো বস্ত্রাদি ইত্যাদি।

(২) কাপড় মেরামত করা বস্ত্রাদি অনেকদিন ব্যবহারের ফলে অনেক সময় একটু আধটু ফেঁসে যায়। পরিষ্কার করার আগে ফেঁসে যাওয়া অংশগুলো রিফু বা তালির মাধ্যমে মেরামত করে নিতে হয়। নতুবা ধোয়ার পর তা আরো ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

(৩) দাগ বিমোচন করা ব্যবহৃত বসেত্র অনেক সময় অন্য বস্তুর দাগ লেগে যায়। বস্ত্র ধোয়ার আগে উক্ত দাগ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী অপসারণ করা প্রয়োজন। নতুবা উক্ত দাগ স্থায়ী হবার এবং অন্য বস্ত্রে লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

(৪) সাবান ও অন্যান্য উপকরণ নির্বাচন করা কাপড় কাচার সময় বিভিন্ন ধরনের কড়া সাবান, মৃদু সাবান ও গুঁড়া সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সুতি ও লিনেন বস্ত্র সাধারণত সাবান বা সোডা দিয়ে কাচা যেতে পারে। তবে মৃদু গুঁড়া সাবান দিয়ে উন্নতমানের সুতি ও লিনেন, রেশমি ও পশমি বস্ত্রাদি ধোয়া যায়। সাদা বস্ত্রকে ধবধবে উজ্জ্বল করার জন্য কাপড়ে নীল ব্যবহার করা হয়। সুতি কাপড়ে প্রয়োজনে মাড় দেয়া যেতে পারে।

(৫) প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি হাতের কাছে রাখা- কাপড় কাচার সময় যেসব উপকরণ ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বালতি, গামলা, মগ, চামচ বা কাঠি, পাতিল, কাপড় কাচার বোর্ড, ব্রাশ, সাকশান ওয়াশার, কাঠের দন্ড, রিঙ্গার ইত্যাদি এবং সম্ভব হলে একটি ওয়াশিং মেশিন।

(৬) ধোয়ার পরিকল্পনা করা- বাড়িতে বিভিন্ন কাপড় ধোয়ার আগে কাপড়গুলো কীভাবে ধোয়া হবে তার একটি পরিকল্পনা করে নিলে কাজের অনেক সুবিধা হয়। কেননা বিভিন্ন বত্র ধোয়ার উপায় ভিন্ন। এখানে রেশমি ও পশমি বস্ত্রের ধোয়ার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা হলো।

রেশমি বস্ত্র ধৌতকরণ
সতর্কতার সাথে সঠিক উপায় অবলম্বন করে ঘরে পানির সাহায্যে রেশমি বস্ত্র হাতে ধোয়া যায়। এরূপ বস্ত্র অনেকক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। তবে অনেক পুরোনো ও অত্যন্ত বেশি ময়লাযুক্ত রেশমি বস্ত্র অল্প কিছুক্ষণ হালকা গরম পানি ও মৃদু সাবান দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে পরিষ্কার করতে সুবিধা হয়।

রেশমি বস্ত্র ধোয়ার প্রথম পর্যায়ে বস্ত্রটি ঝাড়া দিয়ে আলগা ময়লা যতদূর সম্ভব দূর করতে হবে। দাগ লেগে থাকলে সঠিক উপায়ে তা অপসারণ করতে হবে। ধোয়ার জন্য সব সময় হালকা গরম পানি এবং তরল ও মৃদু সাবান ব্যবহার করতে হবে। ময়লা দূর হলে বস্ত্রটি হালকা গরম পানিতে কয়েকবার ধুয়ে সবশেষে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুতে হবে।
রঙিন রেশমি বস্ত্রগুলো ধোয়ার জন্য রিঠার পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। রিঠাগুলো আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রাখলে সকালে রিঠার খোসা চটকালে ফেনাযুক্ত পানি পাওয়া যায়। উক্ত পানি দিয়ে রেশম কাপড়ের ময়লা সুন্দরভাবে পরিষ্কার করা যায়। এতে কাপড়ের রং ওঠে না এবং কাপড়ে নকশা করা থাকলে তা নষ্ট হয় না। ভালোভাবে ময়লা দূর হলে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়। দ্বিতীয়বার পানিতে লবণ ও সিরকা গুলে তাতে বস্ত্রটি ধুতে হয়। এতে রঙের চাকচিক্য ফিরে আসবে। রেশমি বস্ত্র ধোয়ার পর হাত দিয়ে চেপে যতদূর সম্ভব পানি বের করে দিতে হবে। এরপর ছায়ায় শুকাতে দিতে হবে। রোদে বা উচ্চ তাপে শুকালে সাদা রেশমি বস্ত্রে হলুদ দাগ পড়ার আশঙ্কা থাকে এবং রঙিন রেশমি বস্ত্রের রং অনেক ক্ষেত্রেই উঠে যায়।

রেশমি বস্ত্র ধোয়ার মূল কথাগুলো হচ্ছে:

১) সাধারণত ধোয়ার আগে অনেকক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় না।
২) ধোয়ার সময় হালকা গরম পানি এবং সবশেষে একবার ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে হবে।
৩) ক্ষারজাতীয় সাবান ব্যবহার করা যাবে না।
৪) সব সময় মৃদু পানি ব্যবহার করতে হবে।
৫) কখনো ঘষে ঘষে ময়লা পরিষ্কার করতে নেই, এতে তন্তু ছিঁড়ে যেতে পারে।
৬) রঙিন ও ছাপা রেশমি বত্রে ধোয়ার পানিতে সামান্য লবণ ও সিরকা মিশাতে হবে।
৭) কখনো মোচড়িয়ে পানি নিংড়াতে নেই।
৮) সব সময় ছায়ায় শুকাতে দিতে হবে।

Content added By

পশমি বস্ত্র ধৌতকরণ (পাঠ ৪)

27
27

পশমি বস্ত্র অপেক্ষাকৃত মূল্যবান বস্ত্র এবং অসাবধানতার ফলে অতি সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। ধুলোবালি বা ময়লা অত্যন্ত গভীরভাবে এসব বস্ত্রে বসতে পারেনা। এজন্য ধোয়ার আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় না। ঝেড়ে ফেললেই আলগা ময়লা বের হয়ে যায়। অন্যান্য বস্ত্রের মতো পশমি বস্ত্রের ক্ষেত্রেও ধোয়ার আগে প্রয়োজনীয় মেরামত করা দরকার এবং কোনো দাগ থাকলে তা অপসারণ করা প্রয়োজন।

হাতে বোনা পশমি কাপড়গুলো নমণীয় প্রকৃতির হয়। ধোয়ার পর প্রায়ই এদের আকৃতি ঠিক থাকে না। এজন্য হাতে বোনা কাপড়গুলো ধোয়ার আগে একটি সমতল কাগজে বিছিয়ে তার মূল নকশাটি এঁকে রাখতে হয়। ধোয়ার পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানি অপসারণ করে উক্ত সমতল নকশার উপর পোশাকটি বিছিয়ে দিতে হয় এবং হাত দিয়ে টেনে টেনে পোশাকের মূল আকৃতি ঠিক করে দিতে হয়। হ্যাঙ্গারে বা দড়িতে টাঙ্গিয়ে দিলে এদের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়।

ধোয়ার আগে সমতল কাগজে হাতে বোনা পশমি পোশাকের মূল নকশা অঙ্কন

পশমের বস্ত্র ধোয়ার জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হয়। বেশি গরম ও বেশি ঠান্ডা উভয় প্রকার পানিই এসব বস্ত্রের জন্য অনুপযোগী। পানির উষ্ণতা প্রায় ১০০ ফা. হওয়া উচিত। ধোয়ার সময় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পানির তাপমাত্রা একই রকম রাখতে হবে। এরূপ বত্র তাড়াতাড়ি ধুতে হয়। অনেকক্ষণ পানিতে রেখে দিলে এ ধরনের বসত্র শক্ত ও সংকুচিত হয়ে যায়।

পশমি বস্ত্র সাধারণত কম ক্ষারযুক্ত মৃদু সাবান, গুঁড়া সাবান, রিঠার পানি প্রভৃতি দিয়ে ধুতে হয়। একটি বড় গামলায় হালকা গরম পানিতে সাবান গুলে তার মধ্যে কাপড় ভেজাতে হয়। তারপর হালকাভাবে দুহাত দিয়ে নেড়েচেড়ে ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। পশমি বস্ত্র বেশিক্ষণ পানিতে রাখা ঠিক নয়। এতে কাপড় দুর্বল হয়ে যায়। কাপড় ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে গেলে সমতাপমাত্রার পরিষ্কার পানি দিয়ে তিন-চারবার ধুয়ে সাবান ছাড়াতে হয়। একই সাথে দুই বা তিনটি গামলা ও সমান তাপমাত্রার পানি নিয়ে কাজ শুরু করলে কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়।

ধোয়ার কাজ শেষ হলে দুহাতের তালুর সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে বত্র থেকে পানি বের করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কখনো নিড়িয়ে পানি বের করতে নেই। এরপর তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে বাকি পানি শুষে নিতে হবে।

পশমি বস্ত্র মৃদু সূর্যালোকে বা ছায়াযুক্ত স্থানে শুকাতে হয়। মেশিনে বোনা বস্ত্রাদি দড়িতে শুকাতে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু হাতে বোনা বস্ত্র শুকানোর সময় আগের আঁকা কাগজের ওপর সমতল অবস্থায় রেখে আকৃতি ঠিক করে দিতে হয়। ধোয়ার সময় বসত্র যে সংকুচিত হয়, শুকাবার সময় বারবার টেনে দিলে তা দূর হয় এবং বস্ত্রের স্বাভাবিক আকৃতি বজায় থাকে। পশমি বস্ত্র মোটা ও ভারী প্রকৃতির হওয়ায় শুকাবার সময় মাঝে মাঝে কাপড়গুলো এপিঠ-ওপিঠ করে দিলে তাড়াতাড়ি শুকায়।

পশমি বস্ত্র ধোয়ার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে-

১. কখনো খুব গরম বা খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যাবে না।
২. অতিরিক্ত ক্ষারজাতীয় সাবান বা সাবানের গুঁড়া ব্যবহার করা যাবে না।
৩. কখনো ঘষে ময়লা পরিষ্কার করা যাবে না।
৪. ভেজা অবস্থায় বেশিক্ষণ ফেলে রাখা যাবে না।
৫. মোচড়িয়ে পানি নিংড়ানো যাবে না। এতে তন্তুগুলো ছিঁড়ে যেতে পারে।
৬. সূর্যালোক বা অতিরিক্ত গরম স্থানে শুকাতে দেয়া যাবে না।

কাজ- রেশমি ও পশমি বস্ত্র ধোয়ার পদ্ধতি শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করো।
Content added By

মাড় দেওয়া (পাঠ ৫)

33
33

অপরিচ্ছন্ন পোশাকের দাগ তোলা ও ধৌতকরণের পরবর্তী পর্যায়ের কাজ হলো কাপড়ে কিছুটা কাঠিন্য ও চকচকে ভাব আনা। আর পোশাকে কাঠিন্য আনার জন্য যা কিছুই ব্যবহার করা হয় তা আসলে স্টার্চ বা শ্বেতসারজাতীয় পদার্থ। যেমন- ভাতের মাড়, ময়দা, এরারুট, বার্লি, গঁদের কলপ প্রভৃতি।

মাড় প্রয়োগের ফলে-

  • পোশাকের চাকচিক্য ও ঔজ্জল্য বৃদ্ধি পায়।
  • পরিমাণমতো এবং সঠিক নিয়মে মাড় দিলে ধোয়া নরম পোশাকে কাঠিন্য ও নতুনত্ব ফিরে আসে।
  • মাড়ের আস্তরণ পোশাকে ময়লা লাগায় বাধা সৃষ্টি করে।
  • পোশাকের আরাম, সৌন্দর্য ও পারিপাট্য বাড়ায়।

মাড় প্রয়োগের নিয়ম

প্রচলিত মাড়ের মধ্যে ভাতের মাড়ই উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া এরারুট কিংবা ময়দা ঠান্ডা পানিতে গুলিয়ে জ্বাল দিয়ে মাড় তৈরি করে নেয়া যায়। মাড়ের ঘনত্ব কতটা হবে তা নির্ভর করে কাপড়ে কতটা কাঠিন্য আনা হবে তার উপর।

  • পোশাকে ব্যবহারের পূর্বে মাড় ছাকনি অথবা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে।
  • পোশাক উল্টো করে মাড়ে ভিজাতে হয়।
  • ভারী পোশাকে হাল্কা এবং পাতলা পোশাকে ঘন মাড় দিতে হয়।
  • গরম মাড় পোশাকে কম ধরে ও রঙিন পোশাকের রং নষ্ট করে। এজন্য মাড় ঠান্ডা হলে ব্যবহার করতে হয়।
  • কালো ও সাদা পোশাকের ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানিতে নীল গুলে পুরো মাড়ে মিশিয়ে নিলে কাপড়ে মাড়ের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় না এবং উজ্জ্বলতা বাড়ে।
  • মাড় প্রয়োগের পর পোশাকটি ভালোমতো শুকিয়ে না নিলে খারাপ গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে।
  • রেশমি বস্ত্রে মাড় দেয়ার প্রয়োজন হয় না, পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিলেই কাপড় কিছুটা দৃঢ় হয়ে যায়। তবে যদি মাড় দিতেই হয় তবে প্রয়োজনমতো হালকা মাড় ব্যবহার করা যেতে পারে। ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি করতে হলে মেথিলেটেড স্পিরিট ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে ৩ ছটাক পানিতে ১ চা চামচ মেথিলেটেড স্পিরিট গুলে কাপড়টি তাতে ডুবিয়ে নিতে হয়।
  • পশমি বস্ত্রেও মাড় দেয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে সাদা পশমি বস্ত্রগুলো শেষবার পানি দিয়ে ধোয়ার সময় ঐ পানিতে কয়েক ফোঁটা সাইট্রিক এসিড বা লেবুর রস মিশিয়ে নিলে বস্ত্রের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। রঙিন বত্রগুলোর ক্ষেত্রে ভিনেগার ও লবণ পানির সাথে মিশিয়ে নিলে বস্ত্রের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
  • মাড় দেয়া পোশাক রোদে শুকানোর সময় ভালোভাবে ঝেড়ে টান টান করে শুকাতে দিতে হয়। তা না হলে শুকনো কাপড় ইস্ত্রি করতে কষ্ট হয়।

মাড় দেওয়া কাপড় রোদে শুকানো

Content added By

ইস্ত্রি করা (পাঠ ৬)

34
34

পূর্বের শ্রেণিতে আমরা জেনেছি যে, পোশাকের বিভিন্ন অংশ ছাঁটার আগে ও সেলাই করার পর তাদের আকৃতি সঠিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য ইস্ত্রি করার প্রয়োজন হয়। এছাড়া পোশাক ধোয়ার পর শুকালে তা কুঁচকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়। তাই পোশাকের সৌন্দর্য ও পারিপাট্য বাড়ানোর জন্যও ইস্ত্রি করতে হয়। ইস্ত্রির মাধ্যমে তাপ ও চাপ প্রয়োগ করে কাপড়ের ভাঁজ ও কুঞ্চন দূর করা হলে পোশাক চকচকে এবং পরিষ্কার দেখায়। ইস্ত্রি করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হলো-

  • ইস্ত্রি-আমাদের দেশে সাধারণত ৩ ধরনের ইস্ত্রি দেখা যায়।

১) কয়লার ইস্ত্রি-এটি অত্যন্ত পুরোনো মডেলের ইস্ত্রি। এই ধরনের ইস্ত্রির উপরের ঢাকনা খুলে জ্বলন্ত কয়লা ভরতে হয়। জ্বলন্ত কয়লার উত্তাপে ইস্ত্রি গরম হয়। উত্তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকাতে কাপড় পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও জ্বলন্ত কয়লা বের হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

২) লোহার পাতের ইস্ত্রি এধরনের ইস্ত্রি সাধারণত চ্যাপ্টা, মোটা, পেটা লোহার পাতের হয়ে থাকে। এই ইস্ত্রিগুলো চুলার উপর বসিয়ে গরম করে পোশাকের উপর চালানো হয়। তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকাতে অসতর্ক হলে কাপড় পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকে।

৩) ইলেকট্রিক ইস্ত্রি- এটি বিদ্যুৎচালিত এবং ব্যবহারে অত্যন্ত সুবিধাজনক আধুনিক ইস্ত্রি। তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকাতে অল্প সময়ে সব তন্তুর পোশাকই ইস্ত্রি করা যায়।

  • ইস্ত্রি করার বোর্ড- ইস্ত্রি করার জন্য একটি ইস্ত্রি বোর্ড বা সমতল টেবিল প্রয়োজন। যার উচ্চতা একজন মানুষের কোমড় পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বোর্ডের ডানপাশে গরম ইত্রি রাখার ব্যবস্থা থাকে।

কম্বল বা চাদর- ইস্ত্রি বোর্ডের উপর ব্যবহারের জন্য পুরু কম্বল কিংবা চাদর দরকার।

স্লিভ বোর্ড- পোশাকের হাতা, কাফ, কলার ইত্যাদি সুন্দরভাবে ইস্ত্রির জন্য স্লিভ বোর্ড লাগে।

এছাড়া ইস্ত্রির সময় কাপড় ভিজানোর জন্য স্প্রেয়ার, ছোট তোয়ালে, পানির বাটি, নরম পাতলা কাপড় ইত্যাদি প্রয়োজন হয়।

ইস্ত্রি করার নিয়ম-

১. ইস্ত্রি করার পূর্বেই ইস্ত্রিটিতে কোনো কিছু লেগে থাকলে পরিষ্কার করে নিতে হয়। তা না হলে পোশাকে দাগ লেগে যেতে পারে।

২. পোশাকের তত্ত্বর ধরন অনুযায়ী উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৩. নকশা করা বা রঙিন পোশাক উল্টোদিকে ইস্ত্রি করলে নকশা, রং নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।

৪. কাপড়ের লেবেল অনুযায়ী ইস্ত্রি করা উচিত। সুতিবত্র কিছুটা আর্দ্র থাকা অবস্থায় ইস্ত্রি করতে হয়। কাপড়টি যদি শুকিয়ে যায় তবে পানির ছিটা দিয়ে একটি ভেজা তোয়ালে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পেঁচিয়ে রেখে তত্ত্ব নরম করে নিতে হয়।

৫. রেশমি বস্ত্র কিছুটা ভেজা অবস্থাতেই ইস্ত্রি করতে হয়। কারণ একবার শুকিয়ে গেলে তা আবার পানি ছিটিয়ে আর্দ্র করলে কাপড়ে দাগ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে বস্ত্রটি পুনরায় ভেজাতে হয়। বেশি গরম ইস্ত্রি ব্যবহার করলে রেশমি তন্তু পুড়ে যায়। সাধারণত এরূপ বস্ত্র উল্টো দিকে ইস্ত্রি করা উচিত।

৬. পশমি বস্ত্রের ক্ষেত্রে বস্ত্রগুলো সামান্য ভেজা থাকতেই অল্প গরম ইস্ত্রি দিয়ে উল্টোদিকে চাপ দিতে হবে। এক্ষেত্রে একটি স্যাঁতসেঁতে পাতলা সুতির কাপড় পশমি কাপড়ের ওপর বিছিয়ে ইস্ত্রি করতে হয়। কখনো খুব গরম ইস্ত্রি ব্যবহার করতে নেই।

৭. সব সময় সরল রেখায় ইস্ত্রি চালনা করা ভালো।

৮. পোশাক ইস্ত্রি করার সময় সঠিকভাবে ভাঁজ করে নিতে হয়। ভাঁজে ভাঁজে গরম ইস্ত্রির চাপ পড়লে কাপড় তাড়াতাড়ি মসৃণ হয়।

৯. ইস্ত্রি করার পর কাপড় কিছুক্ষণ খোলা বাতাসে রেখে জলীয়বাষ্প বের করে যথাযথ স্থানে রাখতে হয়।

কাজ-তোমার একটি পোশাক মাড় দিয়ে, ইস্ত্রি করে, সঠিকভাবে ভাঁজ দিয়ে শ্রেণিকক্ষে আনবে।
Content added By

অনুশীলনী

39
39

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন:

১. পুরোনো কাদার দাগ তুলতে কোনটি ব্যবহার করা হয়?

ক. ভিনেগার
খ. সাবান পানি
গ. অক্সালিক এসিড
ঘ. গ্লিসারিন

২. পোশাকের কাঠিন্য বজায় রাখতে ভাতের মাড়ের বিকল্প হিসেবে কোনটি ব্যবহার করা যায়?

ক. এসিটোন
খ. এরারুট
গ. বোরাক্স
ঘ. অ্যামোনিয়া

নিচের উদ্দীপকটি মনোযোগ সহকারে পড়ো এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
দুপুরে ভাত খাবার সময় হঠাৎ করে খোদেজার শাড়িতে অসাবধানতাবশত মাংসের তরকারির ঝোল লেগে যায়। খাবার শেষে তিনি তার শাড়িটি পাল্টিয়ে পরের দিন ধোয়ার জন্য রেখে দেন।

৩. শাড়ির দাগটি তোলার জন্য খোদেজা প্রাথমিক অবস্থায় কী ব্যবহার করতে পারতেন?

ক. ঠান্ডা পানি
খ. সাবান পানি
গ. জাভেলী ওয়াটার
ঘ. লবণগোলা পানি

৪. উদ্দীপকে বর্ণিত পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে দাগটি অপসারণ করতে গেলে খোদেজার-
i. দাগ অপসারণ করা কঠিন হবে
ii. শাড়িটির গ্রহণযোগ্যতা কমে যেতে পারে
iii. রাসায়নিক অপসারক দ্রব্যের প্রয়োজন হবে
নিচের কোনটি সঠিক?

ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন:

১. সায়মা সব সময় মাথায় মেহেদী ব্যবহার করেন। একদিন তার জামায় মেহেদীর রং লেগে গেলে তিনি সেটিকে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভিজিয়ে রাখেন। জামাটির সাথে সাদা সুতি শাড়ি ও অধিক ময়লাযুক্ত বিছানার চাদরটিও ভিজিয়ে রাখেন। কাপড়গুলো ধোয়ার পর দেখা গেল তার শাড়িটিতে জামার মেহেদীর রং লেগে পরার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ক. রেশম তন্তুর তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে কোন মাড় বেশি উপযোগী?
খ. কাপড়ে মাড় দিতে হয় কেন?
গ. সায়মার আহমেদের জামাটি থেকে দাগ অপসারণের উপায় ব্যাখা করো।
ঘ. পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সায়মা কি যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করো।

২. সারা ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। তার পোশাক সব সময় তার মা ধুয়ে ইস্ত্রি করে দেন। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরও তার কাপড়গুলোকে নতুনের মতো দেখায়। কয়েকদিন যাবত মা অসুস্থ। তাই এ সপ্তাহে ছুটির দিনে সারা নিজেই তার সাদা রঙের সুতি কাপড়ের স্কুল ড্রেসটি ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে ধুয়ে শুকাতে দেয়। কিন্তু ধোয়ার পর তার ড্রেসটি পরিষ্কার হলেও তত সাদা হলো না। তার ধোয়া কাপড়গুলো ইস্ত্রি করার পর একটি নাইলনের ওড়না ইস্ত্রি করার সময় সেটি পুড়ে যায়। পরবর্তি সময়ে সারা অন্য আরেকটি জামা ইস্ত্রি করতে গেলে সেটিতেও দাগ লেগে যায়।

ক. বল পয়েন্ট কলমের দাগ তুলতে কী ব্যবহার করা হয়?
খ. কাপড় ধোয়ার পূর্বে পোশাকের দাগ অপসারণ করতে হয় কেন?
গ. কাপড় ধোয়ার সময় প্রয়োজনীয় কোন উপকরণটি সারা ব্যবহার করেনি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কাপড় ইস্ত্রির নিয়মগুলো সারা যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি- বিশ্লেষণ করো।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion
;